যুক্তরাজ্যের সিটি মিনিস্টার এবং বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকের প্রতি ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রভাবশালী ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম সানডে টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই আহ্বান জানান।
গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় সরকারি বাসভবন যমুনায় ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম সানডে টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনামলে টিউলিপ সিদ্দিক ও তাঁর পরিবারকে দেওয়া সম্পত্তি ভোগ করার জন্য তাঁর ক্ষমা চাওয়া উচিত। এছাড়া, লন্ডনে টিউলিপ সিদ্দিক যেসব সম্পত্তি ব্যবহার করছেন, সেগুলো নিয়েও তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। যদি প্রমাণিত হয় যে তিনি এসব সম্পত্তি ‘অবৈধ উপায়ে’ অর্জন করেছেন, তবে তা ফেরত দেওয়া উচিত।”
অর্থনীতিবিদ এবং শান্তিতে নোবেল পুরস্কার জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত বছরের ৮ আগস্ট থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম সানডে টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “ব্রিটিশ সরকারের ট্রেজারি ও সিটি মিনিস্টার হিসেবে আর্থিক দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করার দায়িত্বে থাকা টিউলিপ সিদ্দিকের লন্ডনের বাড়িগুলো অর্থ আত্মসাতের মাধ্যমে কেনা হয়েছে কি না, তা তদন্ত হওয়া উচিত।”
সানডে টাইমস জানিয়েছে, তাদের অনুসন্ধানে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে টিউলিপ সিদ্দিক দীর্ঘদিন ধরে এমন একটি বাড়িতে বাস করেছেন, যা দুই বাংলাদেশি ব্যবসায়ী একটি অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে কিনেছিলেন। অথচ আর্থিক স্বচ্ছতার বিষয়ে তিনি সবসময় কথা বলে এসেছেন।
টিউলিপ সিদ্দিক বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে। গত বছরের ৫ আগস্ট ব্যাপক গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান। ভারতে পালোনোর আগে অভ্যুত্থান ঠেকাতে তিনি শত শত মানুষকে পুলিশ বাহিনী দিয়ে হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ, জোরপূর্বক গুম ও দুর্নীতির অভিযোগও রয়েছে।
সানডে টাইমস আরও জানিয়েছে, শেখ হাসিনার শাসনামলে রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের পারমাণবিক শক্তি চুক্তিতে টিউলিপ মধ্যস্থতা করেছিলেন এবং আর্থিকভাবে উপকৃত হয়েছিলেন। তাঁর দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করছে বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশন। তবে টিউলিপ তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগগুলো অস্বীকার করেছেন।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ব্রিটিশ সরকারের দুর্নীতি দমন মন্ত্রী হয়েছেন টিউলিপ এবং তাঁর বিরুদ্ধেই দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এর চেয়ে হাস্যকর আর কিছু হয় না।
ড. ইউনূস আরও বলেন, ‘তিনি যখন কাজটি (দুর্নীতি) করেছেন, তখন হয়তো বুঝতে পারেননি। কিন্তু এখন তো বুঝতে পারছেন। এখন আপনার বলা উচিত, আমি দুঃখিত। আমি তখন বিষয়টি (দুর্নীতির) জানতাম না। এখন আমি জনগণের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি এবং পদত্যাগ করছি। কিন্তু তা বলছেন না। বরং নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করছেন।’
এরপর সঙ্গে সঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, ‘তাঁর (টিউলিপের) পদত্যাগ করা উচিত—এমন বলাটা আমার কাজ না।’
আপনার মতামত লিখুন :