ঢাকা শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১

সংবিধান পুনর্লিখনের পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে কমিশন

কালের সমাজ | নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ২৬, ২০২৪, ০৪:৫৪ পিএম সংবিধান পুনর্লিখনের পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে কমিশন

ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ ঠেকাতে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা এবং দুইবারের বেশি যেন কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে না পারেন— তা সুপারিশ করবে সংবিধান সংস্কার কমিশন। সংসদ নেতা ও দলীয় প্রধান যেন একই ব্যাক্তি না হন, এমন প্রস্তাবও থাকছে সুপারিশে। রাজনৈতিক ঐক্যমত না থাকায় সংবিধান পুনর্লিখনের পরিকল্পনা থেকেও সরে আসার কথা জানালেন কমিশন প্রধান অধ্যাপক আলী রিয়াজ।

তার নেতৃত্বাধীন কমিশন এরইমধ্যে রাজনৈতিক দল, বিশেষজ্ঞসহ সংশ্লিষ্টদের মতামত নিয়ে সংবিধান সংশোধনের সুপারিশের খসড়া চূড়ান্ত করেছে। এসব সুপারিশ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যমতে পৌঁছাতে হবে বলে জানান আলী রিয়াজ।

সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান বলেন, যথাযথভাবে যেন সংবিধান সংস্কার করতে পারি…. সংবিধানে যে সমস্ত পদ এখন একনায়ক প্রতিষ্ঠা করে, সেগুলো রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমতের মাধ্যমে বন্ধ করা, যাতে আরেকজন শেখ হাসিনা-স্বৈরশাসক না হন। গত ১৬ বছরে আমরা যেটা দেখতে পেয়েছি, তা হলো ক্ষমতার এককেন্দ্রীকরণ। এটি কেবল তো ১৬ বছরই না, তখন বেশি নগ্নভাবে দেখতে পেয়েছি।

তিনি আরও বলেন, এককেন্দ্রীকরণের যে সমস্যা, আমাদের সেটি মোকাবেলা করতে হবে। দ্বিতীয়ত, জবাবদিহিতা তৈরি করা। যাতে করে প্রধানমন্ত্রী কিংবা অন্য কোনো ব্যক্তি, তিনি যেন এমন ক্ষমতার অধিকারী না হোন, যাতে তাকে প্রশ্ন করা যাবে না। সেই প্রশ্নগুলো করার জন্য ক্ষমতার ভারসাম্যের বিষয়টি আসছে।

অধ্যাপক আলী রিয়াজের মতে, বিদ্যামান সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী একক ক্ষমতার অধিকারী। এতে জবাবদিহিতা নেই, সৃষ্টি হয়েছে স্বৈরতন্ত্রের।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী একাধিক পদ আকড়ে ধরেন। ক্ষমতার এই ভারসাম্য শুধু রাষ্ট্রপতির সঙ্গে না করে সংসদের মধ্যেও করতে হবে। কেউ যেন দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী না হন, সেই ব্যাপারে আমরা ঐক্যমত দেখতে পেয়েছি।

বিদ্যমান সংবিধানের বিতর্কিত ৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলেরও সুপারিশ করবে এ কমিশন।

প্রফেসর আলী রীয়াজ বলেন, সংসদ সদস্যদের পায়ে বেড়ি লাগানো এবং দল ও ব্যক্তির অনুগত হয়ে পড়া থেকে বের করার ব্যাপারে কোনো রকম দ্বিধা আমি কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের কাছ থেকে দেখতে পাইনি। সিভিল সোসাইটি থেকেও দেখতে পাইনি। সংবিধান বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকেও পাইনি। তাহলে এটা পরিবর্তন করতে হবে। আমরা পরিবর্তনের সুপারিশ করবো।

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিল করেছিল। উচ্চ আদালতের রায়ে আবারও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের এই বিধান ফিরেছে। সংবিধান সংস্কারের সুপারিশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাও থাকছে। তবে আগামী জাতীয় নির্বাচন অন্তবর্তী সরকারের অধীনেই হবে বলে জানিয়েছেন আলী রিয়াজ।

তিনি বলেছেন, এই সরকারের বৈধতা যেমন আইনি, তেমনি এই সরকারের বৈধতার সবচেয়ে বড় জিনিস হচ্ছে নৈতিকতা এবং সেটা যুক্ত আছে গণঅভ্যুত্থানের সঙ্গে। এই প্রক্রিয়াটা অতীতে যেমন হয়েছে, তেমনই হতে হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। কারণ, একটা নতুন বাস্তবতার মধ্যে আছে সবাই। এটা একটা বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি করেছে। ফলে ওইভাবে বিবেচনা করতে হবে।

রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, সরকারের মেয়াদ, বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ সহ বেশকিছু বিষয়ে মতামত পেয়েছে কমিশন। এসব বিষয় প্রস্তাবে থাকতে পারে সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশে।

 

কালের সমাজ/সাএ

 

Side banner