ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের বিমান হামলায় গতকাল শুক্রবার ভোর থেকে রাত পর্যন্ত অন্তত ৬৪ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অনেকে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে খবরটি জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েলি বাহিনী (আইডিএফ)। শুক্রবারের হামলার পর গত দেড় বছরে গাজায় নিহত ও আহত মানুষের সংখ্যা ৫১ হাজার ছাড়িয়েছে। আহতের সংখ্যা পৌঁছেছে প্রায় ১ লাখ ১৭ হাজারে। নিহত ও আহতদের মধ্যে ৫৬ শতাংশই নারী ও শিশু।
গতকাল নিহতদের বেশিরভাগই ছিলেন গাজা শহর এবং উত্তর গাজার বাসিন্দা। তবে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা হয়েছে গাজার প্রায় সব অঞ্চলেই—উত্তর, মধ্য ও দক্ষিণে। বর্তমানে দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফার কাছে শাবৌর এবং তেল আস সুলতান এলাকায় অবস্থান করছে আইডিএফ। সর্বশেষ হামলাগুলো চালানো হয় এই ঘাঁটি থেকেই।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ আবারও জানিয়েছেন, তারা যুদ্ধের লক্ষ্য অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তার ভাষায়, “জিম্মিদের মুক্তি এবং হামাসকে পরাজিত করাই আমাদের লক্ষ্য। সেনাবাহিনী চূড়ান্ত বিজয়ের পথে এগিয়ে চলেছে।”
গতকাল ছিল খ্রিস্টানদের জন্য পবিত্র দিন ‘গুড ফ্রাইডে’। যুদ্ধের মধ্যেও গাজার গির্জাগুলোতে সীমিত পরিসরে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করা হয়। এক স্থানীয় খ্রিস্টান নাগরিক, ইহাব আয়াদ, বলেন, “আগে এই দিনে আমরা পরিবার-পরিজন নিয়ে গির্জায় যেতাম, আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে যাওয়া-আসা করতাম। এবার কিছুই করতে পারিনি। কারণ দখলদার বাহিনীর হামলায় আমার বেশিরভাগ বন্ধু-আত্মীয়ের ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে।”
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের যোদ্ধারা ইসরায়েলের ভেতরে ঢুকে হামলা চালায়, এতে ১,২০০ জন নিহত হন এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। এরপর থেকেই গাজায় টানা সামরিক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। প্রায় ১৫ মাস পর, আন্তর্জাতিক চাপের মুখে গত ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেয় তারা। তবে সেই বিরতি টেকেনি। ১৮ মার্চ থেকে আবারও পূর্ণমাত্রায় হামলা শুরু করে আইডিএফ। দ্বিতীয় দফার অভিযানে গত এক মাসেই দেড় হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
জিম্মি ২৫১ জনের মধ্যে এখনো অন্তত ৩৫ জন জীবিত বলে ধারণা করা হচ্ছে। আইডিএফ জানিয়েছে, সামরিক অভিযানের মাধ্যমেই তাদের উদ্ধারের চেষ্টা চলবে।
জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বারবার গাজায় হামলা বন্ধের আহ্বান জানালেও তাতে কর্ণপাত করেনি ইসরায়েল। আন্তর্জাতিক আদালত আইসিজে-তে ইতোমধ্যে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগও দায়ের হয়েছে। একইসঙ্গে ইসরায়েলের অভ্যন্তরেও যুদ্ধ থামিয়ে জিম্মিদের কূটনৈতিক উপায়ে মুক্ত করার দাবিতে আন্দোলন চলছে।
তবে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু স্পষ্ট করেছেন, হামাসকে সম্পূর্ণভাবে নিঃশেষ না করা এবং সব জিম্মিকে মুক্ত না করা পর্যন্ত এই অভিযান চলতেই থাকবে।
কালের সমাজ// এ.জে
আপনার মতামত লিখুন :