পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) সংস্কার ও ৪৬তম বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের সাথে জড়িতদের শাস্তির দাবিতে রেললাইন অবরোধ করে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থীরা। এসময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অনশনরত শিক্ষার্থীদের সাথে সংহতি জানিয়ে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত বিক্ষোভ চলবে বলে জানান বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা।
শনিবার (২৬ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৭টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু হয়। পরে রাত ৮টার দিকে একটি মিছিল বের করা হয়। বিক্ষোভ মিছিলটি কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি থেকে শুরু হয়ে কে. আর. মার্কেট হয়ে আব্দুল জব্বার মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।
পরে শিক্ষার্থীরা রাত সাড়ে ৮টার দিকে ময়মনসিংহ-ঢাকা রেললাইনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভে অংশ নেন। এ সময় ঢাকাগামী চলন্ত অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস ট্রেন আটকে দেন শিক্ষার্থীরা। পরে রাত ৯ টা ৫৫ মিনিটি শিক্ষার্থীরা অবরোধ প্রত্যাহার করলে আবার রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়।
বিক্ষোভ চলাকালে শিক্ষার্থীরা পিএসসি সংস্কারের দাবিতে ৮ দফা দাবি উত্থাপন করেন। তাদের মূল দাবির মধ্যে রয়েছে, ৪৬তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষার পূর্বেই প্রশ্নফাঁসের সাথে জড়িতদের দ্রুত বহিষ্কার ও শাস্তি নিশ্চিত করা, ভবিষ্যতে ৪৬তম বিসিএস বাতিলের সম্ভাবনা দূর করা,আগামী জুলাই মাসের মধ্যে ৪৪তম বিসিএস-এর চূড়ান্ত ফলাফল (ভাইভায় উত্তীর্ণদের) প্রকাশ করতে হবে এবং জুলাইয়ের শেষে অথবা আগস্টের প্রথম সপ্তাহে ৪৬তম বিসিএস-এর লিখিত পরীক্ষা আয়োজন করতে হবে।
তারা আরও দাবি করেন, ৪৫তম বিসিএস থেকে মৌখিক পরীক্ষার নম্বর ১০০ করতে হবে। ৪৫তম বিসিএস-এর লিখিত ফলাফল জুলাইয়ের মধ্যে প্রকাশ করে ২০২৫ সালের মধ্যে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করতে হবে। প্রত্যেকটি বিসিএসের জন্য সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ প্রকাশ করতে হবে। প্রিলিমিনারি, লিখিত এবং ভাইভা পরীক্ষার নম্বর প্রকাশ করতে হবে এবং লিখিত পরীক্ষার রুটিন ন্যূনতম দুই মাস আগে প্রকাশ করতে হবে। দ্রুত অধ্যাদেশ জারি করে পিএসসি সদস্যের সংখ্যা ২৫-৩০ জনে উন্নীত করতে হবে। লিখিত পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে গতিময়তা, নিরাপত্তা ও নিরপেক্ষতা আনয়নে কমিশনে বসে সরাসরি খাতা দেখার ব্যবস্থা করতে হবে। ভাইভার পূর্বে ক্যাডার পছন্দক্রম পুনরায় নির্ধারণের সুযোগ দিতে হবে। বিশেষ করে ৪৪তম বিসিএসের ভাইভা চলমান থাকায়, চূড়ান্ত ফলাফলের পূর্বে পছন্দক্রম সংশোধনের সুযোগ দিতে হবে। পরবর্তী সকল বিসিএসে ভাইভার আগে পুনঃপছন্দের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। চূড়ান্ত ফলাফলের আগে প্রাক-যাচাই প্রক্রিয়ার পরিকল্পনা বাতিল করতে হবে। শুধুমাত্র ফৌজদারি মামলা বা রাষ্ট্রদ্রোহিতার সুস্পষ্ট অভিযোগ ব্যতীত চূড়ান্ত সুপারিশপ্রাপ্ত কোনো প্রার্থীর গেজেট প্রকাশ আটকানো যাবে না। নন-ক্যাডার বিধি-২০২৩" বাতিল করতে হবে এবং বিসিএস ভাইভায় উত্তীর্ণ সকল প্রার্থীর চাকরির নিশ্চয়তা দিতে হবে।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী শতাব্দী কর বলেন, `আমরা শিক্ষার্থীরা সবসময় আন্দোলন করতে চাই না। কিন্তু বরাবরই সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে যে অন্যায়গুলো হয় তাতে আমরা মাঠে নামতে বাধ্য হই। আমরা ছাত্র সমাজ বিসিএসের ভাইভাতে ২০০ মার্কের পরিবর্তে ১০০ মার্ক রাখার দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্তু বিসিএস পরীক্ষার কোনো সার্কুলারেই আমরা কোনো সংস্কার দেখতে পায়নি। বেকার ছাত্রসমাজের জন্য দেওয়া চাকরিতে যদি তাদের প্রয়োজনের কথাই শোনা না হয় তাহলে সেই চাকরি বা সেই সার্কুলার দেওয়ার মানে টা কি। পিএসসি কর্তৃপক্ষ বলেছে যে ৪৭ তম বিসিএস থেকে এ বিষয়টি সংস্কার করা হবে। তাহলে ৪৫ তম তে সংস্কার করতে অসুবিধা কোথায়? ৪৫ তমতে সংস্কারের পর বাকি সংস্কার করতে হবে।`
কালের সমাজ//বাকৃবি.প্র//এ.জে
আপনার মতামত লিখুন :