ঢাকা রবিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৫, ১৪ বৈশাখ ১৪৩২
তিতাস গ্যাসের অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন

অভিযান করলেও সরকারের কোটি কোটি টাকা লোকসান

হেলাল শেখ এপ্রিল ২৬, ২০২৫, ০৭:২৫ পিএম অভিযান করলেও সরকারের কোটি কোটি টাকা লোকসান

ঢাকার আশুলিয়ায় তিতাস গ্যাসের হাজার হাজার অবৈধ সংযোগ ও অতিরিক্ত চুলা ব্যবহারের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হলেও সরকারের কোটি কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে এবং মোটা অংকের রাজস্ব হারাচ্ছে। স্থানীয় দালাল ও প্রভাবশালীরা মিলে গ্যাস চুরি করে সংযোগ দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। জামগড়ার মীরবাড়ির জামাই হাবিব, ইয়ারপুরের সিরাজ ও জলিল, ইউসুফ মার্কেটের হেলাল উদ্দিন ও কথিত মেম্বার মকবুলসহ অনেকে এই অবৈধ বাণিজ্যে জড়িত। তারা নিজেরাও অবৈধ সংযোগ ব্যবহার করছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ধামসোনা ইউনিয়নের ভাদাইল এলাকায় ডাঃ কাজলের ৬ তলা নতুন ভবনে ১টি বৈধ চুলা থাকলেও ৬৪টি অবৈধ চুলা রয়েছে। কাঠগড়া সরকার বাড়ির ডিস ব্যবসায়ী ইলিম সরকারের বাড়ি এবং আশেপাশের এলাকায়ও বৈধের তুলনায় অবৈধ চুলার সংখ্যা বেশি। দালালরা বিভিন্ন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নাম ভাঙিয়ে নিজেদের রক্ষা করে। প্লাস্টিক পাইপ দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে সংযোগ নেওয়ায় যেকোনো সময় বড় অগ্নিকাণ্ডের আশঙ্কা রয়েছে।

তিতাস কর্তৃপক্ষ অভিযান চালালেও অবৈধ সংযোগ বন্ধ করতে পারছে না। বৈধ গ্রাহকদের চুলায় গ্যাস থাকে না, অথচ অবৈধ সংযোগে সবসময় গ্যাস পাওয়া যায়। অভিযান চালাতে সরকারের লক্ষাধিক টাকা ব্যয় হয়, কিন্তু একই এলাকায় ৮-১০ বার অভিযান করেও সমস্যা নিরসন হচ্ছে না। অবৈধ সংযোগকারীরা টাকা দিলেই তাদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয় না। সরকারি কোনো কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের খবরও পাওয়া যায়নি।

ভাদাইল, ইউসুফ মার্কেট, জামগড়া, মোল্লাবাড়ি, মীরবাড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় দালাল চক্র লাখ লাখ টাকার গ্যাস সংযোগ বাণিজ্য করছে। দিনের বেলা সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলেও রাতের বেলা আবারও সংযোগ দেওয়া হয়। দুই বছরে অপরাধীদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো মামলা হয়নি, মাঝে মাঝে ভ্রাম্যমাণ আদালতে কিছু জরিমানা করা হলেও তাতে লাভ হয়নি।

দালালরা প্রতিটি বাসা থেকে ৩০-৫০ হাজার টাকা এবং হোটেল বা কারখানার সংযোগের জন্য লক্ষাধিক টাকা আদায় করছে। ফলে সরকারি সম্পদের অপচয় হচ্ছে এবং অবৈধ সংযোগকারীরা ভয় পাচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, আপাতত গ্যাস সংযোগ দেওয়ার সক্ষমতা নেই এবং স্থায়ীভাবে গ্যাস সংযোগ বন্ধ রাখার সরকারি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

আশুলিয়ার কাঠগড়া, ইউসুফ মার্কেট, জামগড়া, মীরবাড়ি, চিত্রশাইল এলাকায় অবৈধ সংযোগের বিস্তার ঘটেছে। সিরাজ, হানিফ, আব্দুল জলিল, ফারুক, মকবুল ও জামাই হাবিবসহ অনেকে বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে অবৈধ সংযোগ দিচ্ছেন। এসব অবৈধ সংযোগের কারণে গত কয়েক বছরে অনেক অগ্নিকাণ্ডে নারী ও শিশুসহ বহু মানুষ হতাহত হয়েছেন।

ভালোভাবে গ্যাস না থাকা সত্ত্বেও বৈধ গ্রাহকদের কাছ থেকে ঠিকই বিল আদায় করা হচ্ছে। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন আবাসিক মালিক ও আবাসন কোম্পানিগুলো। গ্যাস সংযোগ না পাওয়ায় ফ্ল্যাট বিক্রি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ২০১৮ সালে এলএনজি আমদানির পর অবৈধ সংযোগের সংখ্যা বেড়ে যায়। দালালরা গ্রাহকদের ভুলভাল আশ্বাস দিয়ে টাকা নিয়েছে, কিন্তু এখন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় গ্রাহকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নতুন সংযোগের জন্য ডিমান্ড নোট ইস্যু হওয়া ও টাকা জমা দেওয়া গ্রাহকদের অর্থ ফেরত দেওয়া হবে। দেশের গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে তিতাস, বাখরাবাদ, জালালাবাদ, পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস ও সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি। তিতাস গ্যাসের আশুলিয়া জোনের প্রকৌশলী জানান, বৈধ গ্রাহক সংখ্যা ৫০ হাজারের বেশি এবং ১,৫০০টির মতো শিল্প গ্রাহক রয়েছে। এ পর্যন্ত ৪৮টির মতো মামলা হয়েছে এবং দুদক কর্মকর্তারা এখন অভিযান পরিচালনায় যুক্ত হয়েছেন। সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

 

কালের সমাজ//হে.প্র//এ.জে

Side banner

পথে-প্রান্তরে বিভাগের আরো খবর