খুলনার মাত্র ৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের শিপইয়ার্ড সড়কটি প্রশস্ত ও উন্নয়ন কাজ দুবছরে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ১১ বছরেও সে কাজ শেষ হয়নি। বরং পিছিয়েছে ছয়বার আর মেয়াদ বাড়াতে গিয়ে প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে ১৫০ কোটি টাকারও বেশি। সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে এই প্রকল্পের ধীরগতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেও অবস্থার পরিবর্তন হয়নি।
অন্যদিকে জমি অধিগ্রহণ নিয়ে দীর্ঘ জটিলতা এবং ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে জরুরি এই প্রকল্পটি এখন খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কেডিএ) গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে। এর মধ্যে নতুন জটিলতা তৈরি হয়েছে খুলনা ওয়াসার পয়ঃনিষ্কাশন পাইপলাইন স্থাপনের কাজ নিয়ে। দেশের রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের পর বিদেশি ঠিকাদার নিজ দেশে ফিরে যাওয়ায় বন্ধ রয়েছে ওয়াসার প্রকল্পটিও। সেটি বন্ধ থাকায় সড়কের কাজ করতে পারছে না কেডিএ।
দীর্ঘদিনেও কাজ শেষ না হওয়ায় ভাঙাচোরা সড়কে অবর্ণনীয় ধকল পোহাতে হচ্ছে চলাচলকারী এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা বলছেন, এই প্রকল্প সড়কের উন্নয়নের চেয়ে আমাদের ভোগান্তি বাড়িয়ে দিয়েছে। বৃষ্টির সময় বিভিন্ন গর্তে পানি জমে থাকে, আর শীতের সময় ধুলার কারণে এই সড়ক দিয়ে চলাচল করা যায় না।
জানা যায়, ‘খুলনার শিপইয়ার্ড রোড প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন’ প্রকল্পটি ২০১৩ সালের জুলাইয়ে একনেকের অনুমোদন পায়। ৯৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে দুই বছর মেয়াদী প্রকল্পটি ২০১৫ সালের জুনে সম্পন্ন হওয়ার কথা। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে কাজই শুরু করতে পারেনি প্রকল্পের বাস্তবায়নকারী সংস্থা কেডিএ। ফলে প্রথম দফায় এক বছর এবং দ্বিতীয় দফায় দুই বছর সময় বাড়িয়ে ২০১৮ সালের মধ্যে কাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। সেই লক্ষ্যও পূরণ না হওয়ায় প্রায় ২৮ কোটি টাকা ব্যয় বাড়িয়ে প্রকল্পটি বিশেষ সংশোধন করা হয়।
বিশেষ সংশোধনের মাধ্যমে ব্যয় বাড়ানোর পরও কাজ শুরু করা যায়নি। পরবর্তীতে তৃতীয় দফায় আরও ১ বছর, চতুর্থবার প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে নতুন করে আরও ৩ বছর, পঞ্চম দফায় দুই বছর এবং সর্বশেষ ষষ্ঠ ধাপে ছয় মাস মেয়াদ বাড়ানো হয়। সেই মেয়াদ শেষ হচ্ছে চলতি ডিসেম্বরে।
সূত্র জানিয়েছে, বারবার মেয়াদ বাড়ানোর পরও চলতি মাসে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কারণ এখনো অনেক কাজই বাকি। তাই সপ্তমবারের মতো আরও এক বছর মেয়াদ বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। এরই মধ্যে প্রকল্প শেষ করার জন্য ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিল কেডিএ। তা অনুমোদন পেয়ে দুই বছরের প্রকল্পের মেয়াদ ১৪ বছরে গিয়ে ঠেকেছে। তারপরও এটি আদৌ বাস্তবায়ন হবে কি না, তা নিয়ে রয়েছে সংশয়।
কেডিএ সূত্রে জানা যায়, গত বছরের অক্টোবরে ওয়াসার কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জুলাই অভ্যুত্থানের পর ঠিকাদার ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীরা তাদের দেশে ফিরে যাওয়ায় কাজ শেষ হয়নি। অবশিষ্ট কাজ শেষ করতে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় চেয়েছিল ওয়াসা। এ কারণে কেডিএর কাজ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করা সম্ভব নয়, তাই এক বছর সময় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়।
এ বিষয়ে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কাজী মো. সাবিরুল আলম বলেন, প্রথম দিকে জমি অধিগ্রহণ জটিলতায় প্রকল্পের কাজ বাধাগ্রস্ত হয়। ২০১৩ সালে অনুমোদন হলেও কাজ শুরু হয়েছে ২০২২ সালে। পরবর্তীতে খুলনা ওয়াসার কারণে প্রকল্পের কাজে ধীরগতি দেখা দেয়। পাইপলাইন স্থাপন কাজে বিদেশি ঠিকাদার এবং পরামর্শকরা নিজ দেশে চলে যাওয়ায় তাদের কাজ মাঝখানে বন্ধ ছিল। সেটা না হলে নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়ে যেত। এ কারণে এক বছর মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।ওয়াসা পাইপলাইন স্থাপনের কাজ করছে। তাদের যতটুকু কাজ শেষ হচ্ছে তারপর আমরা কাজ করছি। মাঝখানে সমস্যা হলেও এখন কাজ পুরোদমে চলছে। সর্বশেষ বৃদ্ধি পাওয়া এক বছর মেয়াদে কাজ শেষ হবে বলে আশা করি।
কালের সমাজ//খু.প্র//এ.জে
আপনার মতামত লিখুন :