রাজবাড়ী সদর উপজেলার খানখানাপুর এলাকার বাসিন্দা আব্দুল গণি শেখ (৪৫) বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত ১৯শে জুলাই ঢাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে হন।
ওই ঘটনায় গত ২০২৪ সালের ২৭শে সেপ্টেম্বর আব্দুল গণি শেখের পিতা মোঃ আব্দুল মজিদ শেখ(৭৩) বাদী হয়ে রাজধানী ঢাকার গুলশান থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। গুলশান থানার মামলা নং-২০, তাং-২৭/০৯/২০২৪ইং, ধারাঃ ৩০২/১০৯/৩৪ পেনাল কোড ১৮৬০।
মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ১নম্বর আসামী করে ৪২জনের নাম উল্লেখ করে ও ৩৫০/৪০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করা হয়। সম্প্রতি সাবেক কাজী কেরামত আলী গ্রেপ্তার হবার এই মামলা সামনে আসে।
গুলশান থানার ওই হত্যা মামলায় রাজবাড়ী জেলার সাবেক দুই সংসদ সদস্যসহ সাবেক এক জেলা জজের নাম রয়েছে। মামলার এজাহারে আসামীর তালিকায় রাজবাড়ীর ৩জনের মধ্যে ১১নং আসামী সাবেক রেলপথ মন্ত্রী ও রাজবাড়ী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোঃ জিল্লুল হাকিম (৭৭), ১২নং আসামী রাজবাড়ী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলী(৭১) এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ ও যুদ্ধ অপরাধ ট্রাইবুনালের কো-অর্ডিনেটর মোহাম্মদ শামসুল হক(৭০) রয়েছেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ১৯শে জুলাই সকাল অনুমান ১১টার সময় মোঃ আব্দুল গণি(৪৫) বৈষম্য বিরোধী কোটা আন্দোলনের মিছিলে অংশগ্রহণ করে গুলশান থানার শাহজাদপুর বাঁশতলা ফুটওভার ব্রিজের পশ্চিম পাশে রাস্তার উপর অবস্থানকালে তার মাথার ডান ও বামে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর পথচারী লোকজন দ্রুত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক বেলা সাড়ে ১২টার দিকে আব্দুল গণি শেখকে মৃত ঘোষণা করে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিদের্শে এবং বর্ণিত অন্যান্য আসামীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নির্দেশনায় এবং তাদের অনুসারী আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সন্ত্রাসীরা তাদের কাছে থাকা অবৈধ অস্ত্র দ্বারা এলোপাতারীভাবে গুলি করে আব্দুল গণিকে হত্যা করে। পুলিশ লাশের সুরতহাল ও অন্যান্য কার্যক্রম পরে পরবর্তীতে ২১শে জুলাই তারিখ দুপুর আনুমানিক সাড়ে ১২টার দিকে তার লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। পরে বাদ আছর রাজবাড়ী সদর উপজেলার খানখানাপুর নিজ বাড়ীতে গণির মরদেহ দাফন করা হয়
মামলার আসামীরা হলো- সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক পরিবেশ মন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সাবেক আইসিটি মন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত, সাবেক তথ্য মন্ত্রী ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, সাবেক রেলমন্ত্রী ও রাজবাড়ী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোঃ জিল্লুল হাকিম, সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ও রাজবাড়ী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলী, সাবেক জেলা জজ ও যুদ্ধ অপরাধ ট্রাইবুনালের কো-অর্ডিনেটর মোহাম্মদ শামসুল হক, ঢাকা-১১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ওয়াকিল উদ্দিন, সাবেক এমপি শাহজাহান খান, আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আতিকুল ইসলাম আতিক, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য খন্দকার এনায়েতুল্লাহ, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিএমপির সাবেক যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার ও গুলশান থানার সাবেক ডেপুটি কমিশনার মোঃ আব্দুল আহাদ মিয়াসহ ৪২ জন। এছাড়াও মামলায় অজ্ঞাতনামা ৩৫০/৪০০ জন আসামী করা হয়েছে।
মামলার বিষয়ে জানতে মোবাইলে রাজধানীর গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ মাহমুদুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সময় আব্দুল গণি শেখ হত্যার ঘটনায় তার পিতা আব্দুল মজিদ শেখ বাদী হয়ে গুলশান থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। বর্তমানে এই মামলাটির র্যাব তদন্ত করছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, গুলশান থানার হত্যা মামলার আসামী সাবেক জেলা জজ ও যুদ্ধ অপরাধ ট্রাইবুনালের কো-অর্ডিনেটর মোহাম্মদ শামসুল হকের বিরুদ্ধে রাজবাড়ী থানায় (মামলা নং-১৪, তাং-৩০/০৮/২০২৪ইং, ধারাঃ ১৪৩/১৪৮/৩৪১/৩০৭/৩২৫/১১৪/৩৪ পেনাল কোড ও তৎসহ ১৯০৮ সালের বিস্ফোরক আইনের ৩/৬ ধারায়) তদন্তাধীন রয়েছে।
জানা গেছে, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সময় রাজবাড়ী শহরের বড়পুলে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার মামলায় গত ৬ই এপ্রিল রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিশেষ অভিযান চালিয়ে রাজধানীর ঢাকার মহাখালী থেকে সাবেক সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলীকে গ্রেফতার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। তাকে রাজবাড়ী থানার মামলা নং-১৪, তাং-৩০/০৮/২০২৪ইং, ধারাঃ ১৪৩/১৪৮/৩৪১/৩০৭/৩২৫/১১৪/৩৪ পেনাল কোড ও তৎসহ ১৯০৮ সালের বিস্ফোরক আইনের ৩/৬ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে পরদিন গত ৭ই এপ্রিল দুপুর পৌনে ১২টায় তাকে রাজবাড়ী সদর ১নং আমলী আদালতে হাজির করা হয়। আদালতের বিচারক জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ তামজিদ আহমেদ তার জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
গত ১৭ই এপ্রিল আদালতে হাজিরার দিন ধার্য্য থাকলেও জি.আর-৩৩২/২৪ এবং জি.আর-৩৩৪/২৪ মামলার নথি দায়রা জজ আদালতে থাকায় সাবেক সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলী রিমান্ড ও শ্যোন এ্যারেস্ট আবেদনের শুনানী হয়নি। প্রিজন ভ্যানে জেলা কারাগার থেকে তাকে কোর্টে আনা হলে পরে রাজবাড়ী সদর আমলী আদালতের বিচারক জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ তামজিদ আহমেদ আগামী ২৮শে এপ্রিল মামলার শুনানী তারিখ ধার্য করেন।
রাজবাড়ী কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) মোঃ জসিম উদ্দিন বলেন, বৈষম্য বিরোধী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় রাজিব মোল্লার দায়ের করা মামলায় সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলীকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। রাজিব মোল্লার দায়ের করা মামলাটি সদর থানার মামলা নং-১৪, তাং-৩০/০৮/২০২৪ইং, জি.আর-৩৩২/২৪। এছাড়াও গোয়ালন্দ মোড়ে গত ৫ই আগস্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় রাজবাড়ী থানায় জিসান খানের দায়ের করা মামলায় তদন্তে প্রাপ্ত আসামী হিসেবে তাকে শ্যোন এ্যারেস্ট দেখানো হয়েছে। জিসান খানের দায়ের করা সদর থানার মামলা নং-১, তাং-০২/০৯/২০২৪ইং, জি.আর-৩৩৪/২৪।
কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক(ওসি) মোঃ জসিম উদ্দিন বলেন, নথি বিজ্ঞ দায়রা জজ আদালতে থাকায় সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলীর রিমান্ড ও শ্যোন এ্যারেস্ট আবেদন শুনানী হয়নি। আগামী ২৮শে এপ্রিল শুনানীর তারিখ ধার্য্য করেছে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক। তিনি আরো বলেন, এ পর্যন্ত হত্যা মামলার কোন শ্যোন এ্যারেস্টের আবেদন পাননি।
রাজবাড়ী জেলা কারাগারের জেল সুপার এনামুল কবির বলেন, রাজবাড়ী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলী বর্তমানে দুইটি মামলায় গ্রেফতার হয়ে রাজবাড়ী জেলা কারাগারে রয়েছে।
কালের সমাজ//রা .প্র//এ.জে
আপনার মতামত লিখুন :