ঢাকা শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২

চাঁদপুরে ভুট্টা উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৮৪ হাজার মেট্রিক টন

এমতেয়াজ পাটওয়ারী ফরহাদ, চাঁদপুর প্রতিনিধি এপ্রিল ১৮, ২০২৫, ০৭:৩১ পিএম চাঁদপুরে ভুট্টা উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৮৪ হাজার মেট্রিক টন

চাঁদপুর জেলা দেশের অন্যতম নদীবিধৌত কৃষি প্রধান অঞ্চল। পদ্মা, মেঘনা, ডাকাতিয়া, ধনাগোদা ও ডাকানদী এ জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওযায় কৃষি উৎপাদনে নদী অববাহিকায় ব্যাপক ফসল উৎপাদন হয়ে থাকে। দেশের অন্যতম দু’টো সেচ প্রকল্প চাঁদপুরেই অবস্থিত হওয়ায় দেশের প্রায় ১৫% খাদ্য শস্য উৎপাদন হয়ে থাকে। এর একটি হলো চাঁদপুর সেচ প্রকল্প এবং অপরটি হলো মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্প। এ ছাড়াও চাঁদপুরে প্রায় ১১-১২টি বিছিন্ন চরাঞ্চল রয়েছে যেগুলো বিপুল পরিমাণ খাদ্য ও রবি ফসল হয়ে থাকে।

চাঁদপুরে চলতি ২০২৪-২৫ মৌসুমের রবি ফসলের উপজেলাওয়ারী আবাদ ৭ হাজার ৯শ ৫০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার প্রতিবেদন মতে- ৮৪ হাজার ২শ ৭০ মে.টন ভুট্টা উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। চাঁদপুরে সাধাণত: আলু,সরিষা,গম ফসল ঘরে তোলার সাথে সাথেই ওই জমিতেই চাষিরা ভূট্টা চাষ করে থাকে। এতে তাদের বাড়তি শ্রম, কীটনাশক ও সার দিতে হয় না তবে বীজ ক্রয়ের মূল্য অনেকটাই বেশি দিতে হচ্ছে বলে চাষীগণ জানান।

চাঁদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ি চাঁদপুর এ তথ্য জানান।

এদিকে এবার আবহাওয়ার অনুকূল পরিবেশ,পরিবহনে সুবিধা,কৃষি বিভাগের উৎপাদনের প্রযুক্তি প্রদান,যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নত,কৃষিউপকরণ পেতে সহজলভ্যতা,বীজ,সার ও কীটনাশক ব্যবহারে কৃষিবিদদের পরামর্শ,ব্যাংক থেকে কৃষিঋণ প্রদান ইত্যাদি কারণে চাঁদপুরের চাষীরা ব্যাপক হারে ভূট্টা চাষ করছে। বিশেষ করে চাঁদপুরের মতলবে ব্যাপক ভুট্টা উৎপাদন করে থাকে চাষীরা। চাষিদের ঋণ সহায়তা দিলে চরাঞ্চলগুলোতে আরো ব্যাপক ভুট্টা চাষ করা সম্ভব। মতলবের চরইলিয়ট, চর কাসিম,ষষ্ট খন্ড বোরোচর, বোরোচর, চাঁদপুর সদরের রাজরাজেস্বর, জাহাজমারা, লগ্মীমারা, বাঁশগাড়ি, চিড়ারচর, ফতেজংগপুর, হাইমচরের ঈশানবালা, চরগাজীপুর, মনিপুর,মধ্যচর, মাঝিরবাজার,সাহেববাজার ও বাবুরচর ইত্যাদি এলাকাগুলোতে ভূট্টা চাষ করা সম্ভব। তবে এবার সবচেয়ে বেশি চাষাবাদ হয়েছে চাঁদপুর সদর, কচুয়া ও মতলব দক্ষিণ ।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামার বাড়ি চাঁদপুরের দেয়া তথ্য সূত্র মতে, চাঁদপুর সদরে চাষাবাদ ৭শ’ ২০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ হাজার ৬শ ৩২ মে.টন। মতলব উত্তরে চাষাবাদ ২ হাজার ৪শ’ ৭০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৬ হাজার ১শ’ ৮২ মে.টন। মতলব দক্ষিণে চাষাবাদ ২ হাজার ৯শ’ ২০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ হাজার ৯ শ’ ৫২ মে.টন।

হাজীগঞ্জে চাষাবাদ ২শ ’৩৫ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ হাজার ৪শ’ ৯১ মে.টন। শাহরাস্তিতে চাষাবাদ ৩৫ হেক্টর এবং উৎপাদন ৩শ’ ৭১ মে.টন । কচুয়ায় চাষাবাদ ১ হাজার ২শ’ ৬০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩ হাজার ৩ শ’ ৫৬ মে.টন।

ফরিদগঞ্জে চাষাবাদ ২শ’ ৮০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ হাজার ৯শ ৬৮ মে.টন। হাইমচরে চাষাবাদ ৩০ হেক্টর এবং উৎপাদন হলো ৩শ’ ১৮ মে.টন।

বর্তমানে প্রায় সব এলাকাতেই দেথাা যায়। একশ্রেণির চাষী ভূট্টার গাছে ফুল আসামাত্রই কেজি দরে ভুট্টার গাছ ঘাস হিসেবে গরুর খামারীদের নিকট বিক্রি করছে।

চাঁদপুর খামারবাড়ির কৃষিবিদ মোবারক হোসেন ১০ এপ্রিল জানান,‘ ভূট্টা উৎপাদনকে আমরা দুটো লক্ষ্যমাত্রায় বিবেচনা করি। এর একটি হলো- মানুষের খাদ্য। অপরটি হলো- গো-খাদ্য। ফলনের আগে ভুট্টা গাছটি খামারীদের নিকট বিক্রি হয়ে যাচ্ছে এমন এক প্রসঙ্গে- উত্তরে তিনি বলেন, ‘ ইদানিং দেখা যাচ্ছে-ভুট্টা চাষীরা তাদের ইচ্ছানুযায়ী ফুল হওয়ার আগেই পাতা ও মুলকান্ডসহ খামারীদের নিকট গরুর খাদ্য বা ঘাস হিসেবে বিক্রি করে দেন। এতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হচ্ছে না। কেননা -কৃষিবিভাগ ঐ হিসেবে বাদ দিয়েই উৎপাদন তথ্য তৈরি করেন। অন্যভাবে বলা যায় -গবাদি-পশু আমাদের কৃষির অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাদেরও তো এটি খাদ্য। এতে উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। দিন দিন চাঁদপুরে ভুট্টার চাষাবাদ বাড়ছে। আমাদের শর্করা চাহিদা পুরণে অন্যন্য ভূমিকা পালন করে থাকে ভুট্টা। মৎস্য ও গো-খাদ্য হিসেবে এর ব্যাপক চাহিদা বিদ্যমান। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে- আমাদের চাঁদপুরের উৎপাদন খুবই ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

 

 

কালের সমাজ// এ.জে

Side banner

পথে-প্রান্তরে বিভাগের আরো খবর