চাঁদপুর শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে চলছে নারী উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণে ২০ দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা। উদ্বোধনের পর থেকে যতই দিন যাচ্ছে ততই মেলা জমজমাট হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে দুপুরের পর থেকে রাত পর্যন্ত নারী এবং শিশুসহ সববয়সী মানুষের সমাগমে মুখরিত থাকে মেলা প্রাঙ্গণ। এবারের মেলায় নারী উদ্যোক্তাদের তৈরী পণ্যের পাশাপাশি শিশুদের বিনোদনের জন্য নাগরদোলা, ডরিমন ট্রেনসন বিভিন্ন রাইট রাখা হয়েছে। ফলে মেলার বেচা বিক্রিও আগের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। এতে করে নতুন উদ্যমে সাফল্যের পথে হাঁটার স্বপ্ন দেখছেন চাঁদপুরের নারীর উদ্যোক্তারা।
চাঁদপুর উইমেন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির আয়োজনে এবং জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত এবারের বৈশাখী মেলায় সবমিলিয়ে ৩৮টি স্টল স্থান পেয়েছে। আয়োজক সূত্রে জানা গেছে এবারের মেলায় অংশ নেওয়া ৩৮টি স্টলের মধ্যে ১টি (মুড়ি,মুরলী, মিষ্টান্নের স্টল) বাদে বাকি সবগুলোই চাঁদপুরের নারী উদ্যোক্তাদের। তারা হলেন নুসরাত, তাজিয়া রাব্বি তিথি. পাপড়ি বর্মন, মুই মারমা, শান্তা মোবারক, অর্পিতা, বাবলী, মমতাজ বেগম, নিলু আক্তার, মায়া আক্তার. মৌসুমী আক্তার আয়াত, নিশি আক্তার, রোজিনা আক্তার,, জাহিন আক্তার, জরিনা,বেগম প্রমুখ। এছাড়াও পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি পুনাক এর ২ টি স্টল রয়েছে।
বুধবার বিকেলে মেলা মাঠে গিয়ে দেখা যায়, শহীদ মিনার প্রাঙ্গণের ছোট্ট মাঠ জুড়ে বর্ণীল আলোয় ঝলমল করছে মেলার স্টলগুলো। যেখানে চাঁদপুরের নারী উদ্যোক্তারা নিজেদের তৈরী হরেক রকম পণ্য দিয়ে স্টল সাজিয়েছেন। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে হাতে তৈরি ঘর সাজানোর আসবাবপত্র, নকশি কাঁথা, বাঁশ ও বেতের তৈরি বিভিন্ন কারুপণ্য, নকশীকাঁথা, মাটির জিনিষপত্র, হাতের কারুকাজ করা থ্রি-পিস, পর্দা, চাদর,, পাটজাত গৃহস্থালি পণ্য, গৃহস্থালি কাজের ব্যবহারিক দরকারি সব পণ্যের সমাহার। এছাড়া নারীদের সাজসজ্জার দৃষ্টিনন্দন গহনা ও প্রসাধনীসহ হাতে তৈরি বিভিন্ন রকমের খাবার বিক্রি করা হচ্ছে। মাঠের মাঝে রয়েছে শিশুদের বিনোদনের জন্য বিভিন্ন রাইডস্।
বৈশাখী মেলার স্টলগুলো ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি স্টলেই নানাবয়সী নারী ও পুরুষ এবং শিশুরা ভিড় করে তাদের পছন্দের পণ্য কিনছেন। তবে আগত ক্রেতা এবং দর্শনার্থীদের মধ্যে নারীদের সংখ্যাই বেশি। এসব স্টল গুলোতে হাতে তৈরী পণ্যের দিকে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের আগ্রহ ছিল সবচেয়ে বেশি।
মেলায় হাতে তৈরী কারুপণ্যের স্টলে পছন্দের পণ্য কিনতে আসা ফরিদগঞ্জ এলাকার মাহমুদা বেগম জানান, এবারের বৈশাখী মেলা নারী উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হচ্ছে জেনে সুদূর ফরিদগঞ্জ থেকে ছুটে এসেছি। কারণ এসব মেলায় নারীদের হাতে তৈরি বিভিন্ন আনকমন কিছু ঘর সাজানোর পণ্য পাওয়া। যা সাধারণত অন্যান্য মেলায় পাওয়া যায় না। আমি বেশ কিছু স্টল ঘুরে-ঘুরে ঘর সাজানোর কিছু শো-পিস কিনেছি।
মায়ের সাথে মেলায় ঘুরতে আসা কলেজ পড়ুয়া নুসরাত জাহান বলেন, এবারের বৈশাখী মেলায় গ্রামীণ মেলার একটা চিত্র দেখতে পাচ্ছি। কারণ অনেকগুলো স্টলে বাঁশ আর বেতের তৈরি বিভিন্ন জিনিসপত্র দেখতে পেয়েছি। এছাড়া নাগরদোলা, ডরিমন ট্রেনসহ শিশুদের বিনোদনের জন্য রাইডসগুলো মেলার আকর্ষণ বাড়িয়ে তুলেছে। এসব রাইডস্ এ শিশুরা মজা করে আনন্দ করছে। আমিও নাগরদোলায় চড়ে বেশ আনন্দ পেয়েছি।
চাঁদপুর সদর উপজেলার বাবুরহাট এলাকার তাসলিমা বেগম বলেন, মেলায় নারী উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণ দেখে ভালো লেগেছে। এখানে নারীরা তাদের তৈরি পণ্যগুলো বিক্রি করার সুযোগ পেয়েছে। এছাড়া মেলার পরিবেশ ও নিরাপত্তা দেখেও ভালো লাগছে। তবে মেলাটি মাসব্যাপী করলে আরও ভালো হতো। ইচ্ছে আছে আরেকবার মেলায় আসার।
বৈশাখী মেলায় অংশ নেওয়া নারী উদ্যোক্তা তাজিয়াস গ্যালারির স্বত্বাধিকারী তাজিয়া রাব্বি তিথি বলেন, এই ধরনের মেলা আমাদের মত নারী উদ্যোক্তার জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। কারন আমরা চাইলেই বড় প্রতিষ্ঠান খুলে আমাদের পণ্য প্রদর্শন এবং বিক্রয় করতে পারিনা। এই ধরনের মেলায় অংশগ্রহণ করতে পেরে আমরা আমাদের পণ্যগুলো প্রদর্শন, বিক্রয় এবং ক্রেতাদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারছি। এজন্য আমি চাঁদপুর উইমেন চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি এবং এর প্রেসিডেন্ট মুনিরা আক্তার আন্টিকে ধন্যবাদ জানাই। পাশাপাশি চাঁদপুর জেলা প্রশাসনকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি যে তারা আমাদেরকে এমন একটি মেলায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ করে দিয়েছেন।
মেলায় অংশ নেওয়া নারী উদ্যোক্তা বিথী আক্তার এবং আয়েশা আক্তার তানিয়া বলেন, নারী উদ্যোক্তারা অনেক প্রতিবন্ধকতা এবং বাধা-বিত-বিপত্তিকে মাড়িয়ে পরিবারের সাপোর্ট নিয়ে এগিয়ে যাওয়া স্বপ্ন দেখে। এরপরেও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে তাদের সাপোর্টের প্রয়োজন। সেই কাজটি করে যাচ্ছে চাঁদপুর উইমেন চেম্বার। তারা নারী উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি স্বাবলম্বী করে তোলার জন্য নানা উদ্যোগ নিয়েছে। এই মেলায় মাধ্যমে অসংখ্য নারী উদ্যোক্তারা তাদের পণ্যগুলো বিক্রয়ের সুযোগ পেয়েছে। আগামীতেও যাতে এমন উদ্যোগ অব্যাহত থাকে, এজন্য আমরা প্রশাসনের দৃষ্টি কামনা করছি।
চাঁদপুর উইমেন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি মুনিরা আক্তার বলেন, এবারের মেলায় চাঁদপুর জেলা প্রশাসন আমাদের সার্বিকভাবে সহযোগিতা করছেন। মূলত নারীর উদ্যোক্তাদের তৈরি পণ্যগুলো প্রদর্শন, বিক্রয় এবং ক্রেতাদের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের উদ্দেশ্য নিয়ে আমাদের এই মেলার আয়োজন করা। এতে নারী উদ্যোক্তারা অনেক বেশি উপকৃত হবে।
তিনি আরো বলেন, চাঁদপুরে জেলা প্রশাসন, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, গণমাধ্যমসহ সর্বমহলের সহযোগিতার ফলে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে মেলার আয়োজন করতে পেরেছি। দিন যতই যাচ্ছে মেলার দর্শনার্থী এবং ক্রেতাদের উপস্থিতি বাড়ছে। বেচাকেনাও ভালো হচ্ছে। এজন্য আমরা সবার প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
কালের সমাজ//এ.জে
আপনার মতামত লিখুন :