প্রবাস ফেরত স্বামী আকরাম হোসেন হত্যার বিচার চেয়ে দীর্ঘ পাঁচ মাস ধরে প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তার স্ত্রী রিমা আক্তার। গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার নারায়নপুর গ্রামের এই নারী এখন ছেলে-মেয়েকে নিয়ে স্বামীর বাড়ি ছেড়ে বাবার বাড়িতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন। বুধবার (১৬ এপ্রিল) স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি এ অভিযোগ করেন।
২০২৪ সালের ৯ নভেম্বর রাতে মাছ ধরার জন্য বাড়ির পাশে কিত্তনখোলা বিলে যান আকরাম হোসেন। রাত গড়িয়ে গেলেও তিনি বাড়ি না ফেরায় পরিবারের সদস্যরা খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। পরদিন সকাল ১০টায় পাশের বরুন বিলে ইসমাইলের ক্ষেতে আকরামের লাশ পাওয়া যায়। লাশে বৈদ্যুতিক শকের চিহ্ন পাওয়া গেলেও পুলিশ তা বিদ্যুৎস্পৃষ্ট দুর্ঘটনা বলে দাবি করে।
রিমা আক্তারের দাবি, তার স্বামীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার আগে আসামিরা হুমকি দিয়েছিল—"দুই কোটি টাকা খরচ হলেও বাড়ি থেকে সরিয়ে দেবো, পায়ের নিচে মাটি রাখব না।" হত্যার পেছনে জমি বিরোধই মূল কারণ বলে মনে করেন তিনি। মরদেহে সাতটি স্থানে বৈদ্যুতিক শকের চিহ্ন ছিল, যা ময়নাতদন্ত রিপোর্টেও উল্লেখ আছে বলে দাবি করেন তিনি।
প্রথমে থানায় গেলে পুলিশ অপমৃত্যুর মামলা রুজু করে, পরবর্তীতে রিমা আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার পর থেকেই আসামিরা তাকে এবং তার সন্তানদের খুনের হুমকি দিয়ে আসছে। ফলে তিনি সন্তানদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে স্বামীর বাড়ি ছেড়ে বাবার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। সন্তানদের শিক্ষা কার্যক্রমও বিঘ্নিত হচ্ছে বলে জানান তিনি।
মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হলেন—সিরাজ উদ্দিন, রাজু, ইসমাইল, আজিজুল ইসলাম, শারিকুল, আতিকুল ইসলাম, নূরুল ইসলাম এবং শৈলন্দ্র চন্দ্র মল্লিক। এদের মধ্যে কয়েকজন সরাসরি হত্যার হুমকি দিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
নূরুল ইসলাম নামের এক আসামি বলেন, "আকরাম হোসেন মাছ ধরতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছেন। আমাদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত হত্যার অভিযোগ মিথ্যা।"
কাপাসিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আজাদ বলেন, “মামলাটি তদন্তাধীন। আসামিরা আদালত থেকে জামিনে রয়েছেন। তদন্ত শেষে দ্রুত চার্জশিট দাখিল করা হবে।”
রিমা আক্তার এখনো আশা করছেন, প্রশাসন সঠিক তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় আনবে এবং তিনি ও তার সন্তানরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারবেন।
কালের সমাজ// এ.জে
আপনার মতামত লিখুন :