বাঙ্গালীর প্রাণের উৎসব ১লা বৈশাখ। এ দিনটি ঘিরে গতকাল সোমবার শুরু হয়েছে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে আবহমান বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী ৩ দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা শুরু। এই মেলা বর্ণাঢ্য উৎসবের মাধ্যমে জাঁকজমকপূর্ণভাবে দেশীয় সাংস্কৃতির সাথে আবহমানকাল থেকেই নিবিড়ভাবে সংশ্লিষ্ট হয়ে আছে।
গ্রাম বাংলার যতগুলো পুরনো ঐতিহ্য টিকে আছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বৈশাখী মেলা। চৈত্র বৈশাখ মাস এলেই এ মেলার ধুমধাম পড়ে যায়।
চারদিকে সাজ-সাজ রব। এ মেলার মাধ্যমেই মানুষ তার পুরনো দুঃখকে ভুলে একটু আনন্দের মাধ্যমে পরবর্তী যাত্রার সূচনা করে। চৈত্রের শেষ এবং বৈশাখ মাসে কৃষকেরা নতুন ফসল পায় এ সময় মেলা তাদের আনন্দ যোগায়। বৈশাখী মেলার আয়োজন অনেক আগেই শুরু হয়েছে।
ধনবাড়ীর নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী ব্রিটিশ সরকারের নিকট বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবী ১ম উত্থাপন করেছিলেন। বাংলার প্রতি অঘাত ভালোবাসার নিদর্শন স্বরূপ তিনি বাংলা নববর্ষে ১লা বৈশাখে বৈশাখী মেলার সূচনা করেন। মেলার রূপকে প্রসারিত করার জন্য ১লা বৈশাখে পণ্যের উৎসব চালু করেন। উৎসবের সময় আগত লোকদের নবাববাড়ীর পক্ষ থেকে বিশাল আয়োজনে খাওয়ানো হতো।
এ মেলার সময় পরবী দেওয়ার প্রথা নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী প্রবর্তন করেন। এ প্রথা ধনবাড়ী এলাকায় এখনও প্রচলন আছে। এ মেলার সময় রাজকোষ থেকে রাজ কর্মচারীদের বিশেষ ভাতা দেওয়া হত। যাতে রাজ কর্মচারীরা তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে আনন্দ ভরে বৈশাখী মেলা উদযাপন করতে পারেন।
এ মেলার প্রধান আকর্ষণ ছিল লাঠি খেলা। এছাড়া বাঁশ, বেত, মাটির বিভিন্ন হস্তশিল্প, কুটিরশিল্প, ম্যাজিক ও পালাগান এ মেলার আকর্ষণ। এলাকার লোকজনের পহেলা বৈশাখ দিনটি আনন্দেই কেটে যেত। আজ অবধি সেই মেলা চলে আসছে। মেলার সৌন্দর্য ও আঙ্গিক বেড়ে যাওয়ায় এই বৈশাখী মেলা একদিনের পরিবর্তে এখন ৩ দিন করা হয়েছে।
এছাড়াও এখানে কাঠের মেলাটিও ঐতিহ্যপূর্ণ। এসব মেলা তিনদিন থেকে সাত দিনব্যাপী হয়ে থাকে। প্রতি বছরের মতো এবারো এপ্রিল মাসের ১৪ তারিখ রোজ সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে বৈশাখি মেলা। শত বছর ধরেই এ মেলা চলে আসছে।
টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ধনবাড়ী সরকারি নওয়াব ইনস্টিটিউশন স্কুল মাঠে প্রতিবছরই বসে এমন এক ঐতিহ্যবাহী মেলা। শত শত বছর ধরে চলে আসা মেলাটি উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়।
কালের সমাজ// এ.জে
আপনার মতামত লিখুন :