চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের আওতায় বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে দুলছে কৃষকের সোনালি স্বপ্ন। চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার ধানখেতগুলো এখন সবুজ থেকে ক্রমেই সোনালি রঙ ধারণ করছে। মাঠে মাঠে দিগন্তজোড়া ফসলের দৃশ্য যেন কৃষকের মুখে এনে দিয়েছে আশাবাদের দীপ্ত হাসি।
চারদিকে এখন একটিই চিত্র—অবারিত সবুজ মাঠে বাতাসে দুলছে পাকা ধানের শীষ, আর তার সঙ্গে দুলছে হাজারো কৃষকের আশা-ভরসা। প্রকৃতির অনুকূল পরিবেশে ধানগুলো সুস্বাস্থ্যেই বেড়ে উঠেছে, যার ফলে কৃষকের ঘরে এবার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
কৃষকেরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন শেষ মুহূর্তের পরিচর্যায়। কেউ কেউ ইতোমধ্যেই ধান কাটতে শুরু করেছেন। কেউবা তৈরি করছেন খলা, পরিষ্কার করছেন গোলা ও বাড়ির আঙ্গিনা। বাজারে কাস্তে, বিন্দা, পায়চা, ত্রিপল ও বস্তার কেনাকাটায় জমজমাট অবস্থা। চলছে ধান ঘরে তোলার প্রস্তুতি।
তবে এই খুশির মাঝেও রয়েছে শঙ্কার ছায়া। কারণ আর কদিন পরই বৈশাখের আগমন। এই সময়টিকে কৃষকেরা মনে করেন `রিস্কি সিজন`। হঠাৎ ঝড়, শিলা বৃষ্টি কিংবা অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের ভয়ে কিছুটা উদ্বেগে রয়েছেন তারা।
সরকারি কৃষি-বান্ধব নীতিমালা, উপজেলা কৃষি দপ্তরের নিয়মিত পরামর্শ, পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ ও সেচ সুবিধা এবং কৃষকের অক্লান্ত পরিশ্রমের সমন্বয়ে এ বছর ফলন ভালো হওয়ার আশাবাদ দেখা দিয়েছে। কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে উন্নত জাতের বীজ, সার ও কীটনাশক সরবরাহ এবং নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন চলমান রয়েছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, মতলব উত্তর উপজেলায় চলতি মৌসুমে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে ৯,৯৮৪ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬৫,৪৯৫ মেট্রিক টন ধান এবং ৪৩,১৩০ মেট্রিক টন চাল। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক জমিতে আবাদ হওয়ায় ফলনের পরিমাণ আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
ছেংগারচর পৌরসভার আদুরভিটি গ্রামের কৃষক আয়নাল হোসেন (৫৫) বলেন,
"প্রতিদিন জমির খবর নিতে যাই। ধান যেভাবে পেকেছে, সময়মতো ঘরে তুলতে পারলে আমাদের সারা বছরের খরচ নির্বাহ সহজ হবে।"
কৃষ্ণপুর গ্রামের কৃষক মো. কামাল হোসেন (৫০) জানান,"গত বছরের তুলনায় এবার ধান অনেক ভালো হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে প্রতি একরে ৭০ মণ পর্যন্ত ধান হতে পারে।"
ঠাকুর গ্রামের কৃষক মো. আবুল হোসেন বলেন,"সেচ খরচ ও শ্রমিক সংকট কিছুটা ছিল, তবে এবার সময়মতো সার, কীটনাশক ও বিদ্যুৎ পেয়েছি। ফলে ফলন ভালো হচ্ছে। তিন একর জমিতে ধান করেছি, এবার ফলন বেশি হবে বলে মনে করছি।"
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ফয়সাল মোহাম্মদ আলী বলেন,"বাম্পার ফলন নিশ্চিত করতে আমরা মাঠপর্যায়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। কৃষকেরা যাতে লাভবান হন, সে লক্ষ্যে নিয়মিত পরামর্শ এবং পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবার রেকর্ড পরিমাণ ধান উৎপাদিত হবে।"
মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের ছায়ায় বেড়ে ওঠা ধান এখন কৃষকের আশার আলো। আসন্ন বৈশাখে প্রকৃতি সহায় থাকলে, মাঠের সোনালি স্বপ্ন সত্যিই পরিণত হবে সোনালি হাসিতে। ধান গোলায় তুলতে পারলেই পরিশ্রমের প্রকৃত প্রতিদান পাবেন কৃষকেরা।
কালের সমাজ//এ.জে
আপনার মতামত লিখুন :