ঢাকা শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৫, ৪ বৈশাখ ১৪৩২
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

সাফারি পার্কের প্রাণী নিখোঁজ: দোষীদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে

কায়সার আহমেদ, শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি এপ্রিল ৯, ২০২৫, ০৬:১২ পিএম সাফারি পার্কের প্রাণী নিখোঁজ: দোষীদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে

গাজীপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক থেকে বিরল ও দুর্লভ প্রজাতির প্রাণী হারিয়ে যাওয়ার ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

বুধবার (৯ এপ্রিল) পার্ক পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, "শুধু চাকরিচ্যুতি নয়, এমন শাস্তি দিতে হবে যেন ভবিষ্যতে কেউ এমন গাফিলতি করতে সাহস না পায়।"

তিনি বলেন, পার্কে পরিদর্শনের সময় তিনটি জায়গায় গাফিলতির চিত্র তাকে ব্যথিত করেছে। হাতি রাখার স্থান, লেমুর নিখোঁজ হওয়ার এলাকা ও জাগুয়ারের আবাসস্থল যথাযথ পরিবেশসম্মত নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি। “সাফারি পার্ক মানেই প্রাণীর জন্য প্রাকৃতিক পরিবেশের মতো ব্যবস্থা। এখানে প্রাণী দেখে মানুষের ভালোবাসা তৈরি হোক, সেটাই উদ্দেশ্য হওয়া উচিত,” বলেন উপদেষ্টা।

উল্লেখ্য, পার্ক থেকে ম্যাকাও, লেমুর ও খাটো লেজ বানরের মতো দুর্লভ প্রজাতির প্রাণী নিখোঁজ হয়েছে সম্প্রতি। এ বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, “ময়না বা টিয়া পাখি হারায় না, অথচ লেমুর হারায়। এর মানে এখানে কিছু একটা গড়বড় আছে। বিষয়টি অবশ্যই গভীর তদন্তের দাবি রাখে।”

তিনি আরও বলেন, “নিরাপত্তার ঘাটতির কারণেই এসব প্রাণী চুরি হচ্ছে। ১৪ দিন পর মামলা করে কোনো ফল হবে না। দ্রুত আইনি পদক্ষেপ না নেওয়ায় প্রাণীগুলো উদ্ধারের সম্ভাবনা অনেকটাই কমে গেছে।”

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, বিষয়টি খতিয়ে দেখতে প্রাণী বিশেষজ্ঞ ও অপরাধ বিশ্লেষক অন্তর্ভুক্ত করে শক্তিশালী তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তদন্তে স্বচ্ছতা আনতে বাহিরের বিশেষজ্ঞদের যুক্ত করার কথাও জানান তিনি।

উপদেষ্টা বলেন, “সব কাজ প্রকল্পের ওপর নির্ভর করে চললে হবে না। সরকারের নিয়মিত বাজেট থেকেই এ ধরনের জাতীয় সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে।”
তিনি জনবল সংকটের বিষয়টি তুলে ধরে স্থানীয় জনসম্পৃক্ততার মাধ্যমে দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার প্রস্তাবও দেন।

হাতি ও জাগুয়ারের আচরণ পর্যবেক্ষণ করে উপদেষ্টা জানান, কিছু প্রাণীর জীবনমান সন্তোষজনক নয়। একমাত্র খাটো লেজ বানরটি নিঃসঙ্গভাবে আছে, যা পার্ক নীতির পরিপন্থী বলে উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি বলেন, “যারা গাজীপুরে থাকেন, তাদেরই প্রথম দায়িত্ব জাতীয় এই সম্পদকে রক্ষা করা। প্রশাসনের পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়ানো জরুরি।”

উপদেষ্টা আরও বলেন, “ম্যাকাও, লেমুর হারিয়ে যাওয়া মানে আমাদের ব্যর্থতা। যারা দোষী, তাদের কঠোরতম শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।”

পরে তিনি ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান পরিদর্শন করেন এবং বন বিভাগের চম্পা সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় অংশ নেন। সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রধান বন সংরক্ষক আমীর হোসাইন চৌধুরী, জেলা প্রশাসক নাফিসা আরেফীন, পুলিশ সুপার ড. চৌধুরী যাবের সাদেক, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের বিভিন্ন কর্মকর্তাবৃন্দ।

সভায় তিনি গাজীপুরের বন ও পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের নির্দেশনা দেন এবং প্রয়োজনীয় সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন।

 

কালের সমাজ//এ.জে

Side banner