ফুল মানেই বাহা, আর বাহা মানেই সৃষ্টির পূজা। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মানুষজন মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) উদযাপন করলেন তাদের অন্যতম বৃহৎ উৎসব ‘বাহা পরব’—যা বাংলায় ফুল উৎসব হিসেবেও পরিচিত।
বসন্তের আগমনে প্রকৃতিতে নতুন পাতা ও ফুল ফোটে। সাঁওতালদের বিশ্বাস, সেই নতুন সৃষ্টিকে ব্যবহারের আগে প্রকৃতিকে সম্মান জানাতে হয়। তাই এই ঋতুকে কেন্দ্র করেই তারা পালন করে বাহা উৎসব—নবজীবন ও প্রকৃতির সাথে পুনর্মিলনের উৎসব।
উপজেলার কামদিয়া ইউনিয়নের তল্লাপাড়া গ্রামের সেভেন ডে অ্যাডভেন্টিস্ট প্রি-সেমিনারি স্কুল প্রাঙ্গণে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, ফ্রি প্রেস আনলিমিটেড এবং আর্টিকেল নাইনটিন এর সহায়তায় ও অবলম্বন-এর আয়োজনে দিনব্যাপী উৎসবটি উদযাপিত হয়।
পূজা-অর্চনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় উৎসব। এরপর সাঁওতাল সংস্কৃতি ও কৃষ্টিকে তুলে ধরতে পরিবেশিত হয় মনোমুগ্ধকর নৃত্য-গীত। নারী, পুরুষ ও কিশোর-কিশোরীরা দল বেঁধে রঙিন পোশাকে অংশ নেয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনায়।
উৎসবে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দা ইয়াসমিন সুলতানা, পরিবেশ আন্দোলনের আহ্বায়ক ওয়াজিউর রহমান রাফেল, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক জহুরুল কাইয়ুম, কবি অমিতাভ দাশ হিমুন, অবলম্বনের নির্বাহী পরিচালক প্রবীর চক্রবর্তী, টনি চিরান, এ্যান্থনি রেমা, সুরভী মার্ডি, অঞ্জলী রানী, সেলিনা আক্তার সোমা, মনির হোসেন সুইটসহ আরও অনেকে। সভাপতিত্ব করেন বাহা পরব উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক জেমস সরেন।
সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষা, কৃষ্টি ও সংস্কৃতিকে রক্ষার জন্য নিজস্ব ভাষায় শিক্ষাদান, কালচারাল একাডেমি স্থাপন এবং সরকারি সহায়তার গুরুত্ব তুলে ধরেন বক্তারা।
তারা বলেন,“বাহা উৎসব শুধু আনন্দের নয়, এটি প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। এই উৎসব যেন হারিয়ে না যায়, তার জন্য প্রতিবছর নিয়মিত আয়োজন হওয়া উচিত।”
ফুল মানেই বাহা। এই উৎসব মূলত ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে পালন করে সাঁওতালরা। উত্তরাঞ্চলের সমতলে বসবাসকারী আদিবাসীদের মধ্যে যেমন—ওঁড়াও, মুন্ডা, মাহাতো, রাজওয়ারসীসহ প্রায় ৩৮টি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী এই উৎসবে অংশগ্রহণ করে।
কালের সমাজ//এ.জে
আপনার মতামত লিখুন :