দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলবর্তী উপজেলা কয়রায় বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় ২৩টি সড়ক সংস্কারের জন্য বরাদ্দ হলেও প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও কাজ শেষ হয়নি। ফলে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কয়রার বিভিন্ন এলাকায় বছরব্যাপী প্রাকৃতিক দুর্যোগে সড়কগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব মেরামতের জন্য গত কয়েক অর্থবছরে এলজিইডি বিভিন্ন প্রকল্পের অধীনে বরাদ্দ দেয়। টেন্ডার ও কার্যাদেশের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করলেও অধিকাংশ প্রকল্প নির্ধারিত সময়ের মধ্যেও শেষ হয়নি।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, সড়কগুলো দীর্ঘদিন ধরে অসমাপ্ত পড়ে থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। খানাখন্দ আর ধুলার কারণে সড়কে যাতায়াত করা কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে।
শাকবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ৬ নম্বর কয়রা প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত সড়কের কাজ পায় জয় মা ট্রেডার্স। ২০২২ সালের মে মাসে কাজ শুরু হয়ে শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৩ সালের এপ্রিলের মধ্যে। তবে এখনও কাজ অসম্পূর্ণ। সড়কে ফেলা ইটের খোয়া এখন ধুলো হয়ে বাতাসে উড়ছে। একই অবস্থা কয়রা সদর থেকে ৪ নম্বর কয়রাগামী সড়কের। এটি সংস্কারের কার্যাদেশ দেওয়া হয় ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে, কিন্তু এখনও মাত্র ৩৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
দেয়াড়া গোপালের মোড় থেকে হোগলা পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার সড়কে ফাটল দেখা দিয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, কাজ নিম্নমানের হওয়ায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
মহারাজপুর ইউনিয়নের সাইফুল ইসলাম বলেন, “ঠিকাদাররা দুই-তিন মাস পরপর শ্রমিক পাঠিয়ে দেখানোর মতো কাজ করে, যেন মনে হয় কাজ চলমান। পরে প্রকৌশলীদের সহায়তায় বিল ছাড় করে আবার নিরুদ্দেশ হয়ে যায়।”
কয়রার সহকারী প্রকৌশলী আফজাল হোসেন জানান, ঠিকাদারদের বারবার তাগাদা দেওয়া হয়েছে। কয়েকজন সময় চেয়ে আবেদন করেছেন। তবে সময়সীমা পার হয়ে গেলেও যারা কাজ শেষ করেনি, তাদের কার্যাদেশ ও জামানত বাতিল করা হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী দারুল হুদার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এলজিইডি খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামরুল ইসলাম সরদার বলেন, “এ বিষয়ে তেমন জানি না। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
‘সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা ফাউন্ডেশন’-এর সমন্বয়ক ওবায়দুল কবির সম্রাট বলেন, “সুন্দরবন সংলগ্ন অঞ্চলের অবকাঠামো উন্নয়নকাজ সময়মতো শেষ না হওয়া যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। ঠিকাদারদের গাফিলতি ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দুর্নীতিই এর জন্য দায়ী।”
২৩টি সড়কের সংস্কার ছাড়াও কয়রার ১৪/১ নম্বর পোল্ডারের ১২৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ এবং ৬৫ কিলোমিটার দীর্ঘ কয়রা-বেতগ্রাম আঞ্চলিক মহাসড়কের উন্নয়ন কাজও এখনও অসম্পূর্ণ রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ঠিকাদার বলেন, নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় তারা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। এজন্যই কাজ ধীরগতিতে চলছে। তারা সময় বাড়ানোর আবেদন করেছেন।
কালের সমাজ// এ.জে
আপনার মতামত লিখুন :